বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫২ অপরাহ্ন
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:’যারা দিন আনে দিন খায়, মাস্ক কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের কে দেখবে? কীভাবে তাদের দিন যাবে? কান ধরে উঠবস করানো বৃদ্ধটি তো ভ্যানচালক। পেটের দায়ে সংসারের চাল-ডাল কিনতে এসেছিলেন যশোরের মণিরামপুরের চিনেটোলা বাজারে। উপজেলার এসিল্যান্ড সাইমা হাসান জনসম্মুখে তাকে কান ধরে উঠবস করালেন। আবার মজার ঘটনা মনে করে তিনি ছবি তুললেন নিজের মোবাইলে। এসিল্যান্ড দেশের সামান্য একজন কর্মচারি। অতিরঞ্জিত তো কোন কিছুই ভালো না। মেনে নিলাম করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবে কেউ যদি আইন ভঙ্গ করে তার জন্য রয়েছে শাস্তির ব্যবস্থা। কিন্তু কান ধরে উঠবস করানো অতঃপর নিজ মোবাইলে ছবি তোলা শাস্তির কথা তো আইনে কোথায় বলা হয়নি। যদিও এসিল্যান্ডরা নিজেদের ম্যাজিস্ট্রেট বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট শব্দের বাংলা অর্থ তো ফৌজদারী বিচারক ও শাসনকর্তা। তাঁকে তো ফৌজদারী আইন জেনে বিচারকার্য পরিচালনা করতে হবে। কয়েকদিন আগে আমি একটি কলাম লিখেছিলাম। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা কলামটি ঘটা করে প্রকাশ করেছে। আমার লেখার শুরুতেই ছিল ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’ শিরোনামে শামসুর রাহমান এক কবিতা। দেশের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মায়াকান্না করে ভ্রাম্যমান আদালতের ক্ষমতা নিয়ে এক ধরনের উদ্ভট এক উটের পিঠে চড়ে জনগণের ওপর যা খুশি তাই করছে। পাঠক নিশ্চয়ই কয়েকদিন আগে কুড়িগ্রামের ডিসি’র অপকর্মের কথা মনে আছে। সাথে দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকেও লেলিয়ে দিয়েছিল সাংবাদিক আরিফকে হত্যার জন্য। যদিও মহামান্য হাইকোর্ট ওই ডিসি এবং দিনমজুর সন্তান ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার মামলা করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। বৃটিশ তো আইন তৈরী করেছিল শাসন শোষনের জন্য, দরিদ্র কৃষকের জমির খাজনা আদায়ের জন্য কিংবা প্রজাকে কাচারীতে ধরে নিয়ে মারধর, হাত-পা বেঁধে আঁধার কুঠুরিতে ফেলে রাখা, প্রজার স্ত্রী-কন্যাকে বন্ধক হিসেবে আটক রাখা, বিষয় সম্পত্তি ক্রোক করা এবং ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা। বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থা এখনও কি তার তার উত্তরাধিকার বহন করছে? যদি উত্তর পজেটিভ হয় তাহলে যুগে যুগে এসিল্যান্ডদের বিজয় হোক!
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইন গ্রন্থ প্রণেতা, গবেষক ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email: seraj.pramanik@gmail.com মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮